সোলাস ট্যাবলেট কি চুষে খেতে হয়
অনেকেই হয়ত জানেন না সোলাস ট্যাবলেটটা কী? সাধারনত আমরা প্রত্যেকে তিনমাস অন্তর অন্তর কৃমির ওষুধ খেয়ে থাকি। তাও আবার চুষে খাওয়ার ওষুধ যেমন, অ্যালবেন ডিএস অথবা এলমেক্স-৪০০ মি.গ্রা আমরা বেশি খেয়ে থাকি। যা চুষে চুষে আমাদের খেতে হয়। কিন্তু অনেকেই আছে, এই চুষে খাওয়ার ওষুধটি ঠিকভাবে খেতে পারে না। তাই অর্ধেকে দিয়ে তারা ওষুধটি গিলে ফেলে বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফেলে দেয়। তাদের জন্য মূলত দরকার সোলাস ট্যাবলেট।
★ সোলাস ট্যাবলেটের ব্যবহার :
সোলাস ট্যাবলেট মূলত সুতাকৃমির সংক্রমণ, বক্রদেহে কৃমিবিশেষ সংক্রমণ, পিন ওয়ার্ম সংক্রমণ, কেঁচোকৃমি সংক্রমণ, পেট সংক্রমণ, পরজীবী পোকা সংক্রমণ, অন্ত্রে সংক্রমণ, উইপ ওয়ার্ম সংক্রমণ এবং অন্যান্য অবস্থার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
★ সোলাস কখন খাবেন?
কৃমি আকারে খুবই ছোট, এরা আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। জেনে আরো অবাক হবেন যে, এ রকম একটি কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে দিনে শূন্য দশমিক ২ মিলিলিটার রক্ত শুষে নেয়। অনেক কৃমি শরীরে থাকলে প্রতিদিনই বেশ কিছু পরিমাণ রক্ত হারিয়ে যায়। ফলে শিশুরা অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগে। বড়রাও কম ভোগেন না। এ ছাড়া কৃমির কারণে অ্যালার্জি, ত্বকে চুলকানি, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কখনো অন্ত্রের বা পিত্তথলির নালিতে কৃমি আটকে গিয়ে বড় ধরনের জটিলতা হয়। কৃমি সংক্রমণ তাই বড় ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ধরণের সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সোলাস খেতে পারেন।
★ কখন সোলাস থেকে বিরত থাকবেন?
যেমন, যাদের এলার্জি প্রতিক্রিয়া রয়েছে অথবা ২ বছরের কম বয়সী শিশু অথবা গর্ভবতী নারীরা সোলাস নেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
★ কৃমি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা—-প্রথমেই আমাদের জানা দরকার, কৃমি কেন হয়? নোংরা পরিবেশ, অনিরাপদ পানি পান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, খালি পায়ে হাঁটা কৃমি সংক্রমণের জন্য দায়ী। কৃমি হলেও ওষুধের মাধ্যমে দূর করার উপায় আছে। কিন্তু অনেকে নানা ভুল ধারণার জন্য ভয়ে কৃমির ওষুধ খান না। শিশুদেরও খাওয়াতে চান না। কিন্তু ওষুধ নিয়ম মেনে খেলে আর সহজ কিছু উপায় মেনে চললে সহজেই কৃমি দূর করা যায়।
★ সোলাসে কৃমি দূর করবেন যেভাবে:—-
প্রতি তিন মাস পরপর পরিবারের সবাই তিনদিনে ৬টি করে সোলাস ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। এটি দিনে ও রাতে একটি করে সেবন করতে হয়। আপনি চাইলে সাতদিন বা চৌদ্দদিন পর আরেকটি ডোজ নিতে পারেন। দুই বছরের নিচে কোনো শিশুকে খাওয়াতে হলে প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিনি খেলে বা মিষ্টি খেলে কৃমি হবে বলে যে ধারণা প্রচলিত, তা সঠিক নয়। মিষ্টি বা চিনি খাওয়ার সঙ্গে কৃমির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং নোংরা হাতে বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কৃমি হবে, এটা নিশ্চিত। কৃমি হলে পায়ুপথ চুলকায় বলে শিশুরা সেখানে হাত দেয়। পরে আবার সেই হাত মুখে দেয়। এভাবেই সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। তবে পায়ুপথ চুলকানো মানেই কৃমি সংক্রমণ নাও হতে পারে। কৃমি সংক্রমণের আরো উপসর্গ আছে। যেমন: ওজন না বাড়া, পেট ফাঁপা, পেট কামড়ানো, আমাশয়, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি। গরমকালে কৃমিনাশক খাওয়া যাবে না—এমন ধারণারও কোনো ভিত্তি নেই। গরম, শীত, বর্ষা যেকোনো সময়ই কৃমিনাশক ওষুধ সোলাস খাওয়া যাবে। তবে এটি খাওয়ার আগে ও পরে খাওয়া যায়।
কৃমিনাশক নিরাপদ ওষুধ সোলাস। এর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কারো কারো পেট ফাঁপা বা বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় কৃমিনাশক খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার যে খবর পাওয়া যায়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা ও কুসংস্কারজনিত। কৃমি থেকে বাঁচতে পানি অবশ্যই ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে পান করবেন। শাকসবজি ও মাংস খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিবেন। খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিবেন। শিশুদের খাওয়ার আগে ও শৌচাগার ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে কীভাবে ভালো করে হাত কচলে ধুতে হয়, তা শেখানো জরুরি। বাইরের খোলা অপরিচ্ছন্ন খাবার না খাওয়াই ভালো। মাঠঘাটে শিশুদের খালি পায়ে খেলতে দেবেন না। কেবল গ্রামে বা রাস্তায় থাকা শিশুদের কৃমি হয়—এই ধারণাও ভুল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে-কারো কৃমি সংক্রমণ হতে পারে। তাই অপুষ্টি এড়াতে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াই ভালো।