আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি এবং অশ্বগন্ধা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কেননা এতে যে সকল পুষ্টি উপাদান গুলো বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, স্মৃতিশক্তি প্রখরে সাহায্য করে, রক্তশূন্যতার সমস্যা নিরাময় করে এবং ধ্বজভঙ্গ দূরীকরণে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে।
আর তাই কেউ যদি আলকুশি ও অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম মেনে নিয়মিত খান তাহলে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পাবেন। কিন্তু অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না, অশ্বগন্ধা মূলত কিভাবে খেলে উপকার পাওয়া যায় এবং কিভাবে খেলে আমাদের শরীরে কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। ঠিক এ কারণেই আজ আমরা অশ্বগন্ধা এবং আলকুশি একসাথে খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
★★★আলকুশি ও অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম: কীভাবে সঠিকভাবে মিশিয়ে খাবেন?
আলকুশি ও অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, এক গ্লাস গরম পানি অথবা গরম দুধে এক চামচ আলকুশি পাউডার এবং এক চামচ অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়া। তবে এক্ষেত্রে এর উপকার শক্তি আরো বৃদ্ধি করতে আপনি মিশাতে পারেন জাফরান ও মধু। আমরা সবাই জানি মধু আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য পণ্য। মধুর উপকারিতা কথা বলে শেষ করার মত নয়। একইভাবে জাফরান রয়েছে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান যেগুলো আমাদের শরীরের বিশেষ কিছু কাজে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রাখে।
তাই আপনি যদি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে চান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান সেই সাথে ধ্বজভঙ্গ দূর করতে চান তাহলে আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম মানতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধে এক চামচ অশ্বগন্ধা, এক চামচ আলকুশি, এক চামচ মধু এবং সামান্য কিছু জাফরান ছিটিয়ে নিয়মিত পান করুন।
আর এই পানীয়টি খাবার সঠিক সময় হচ্ছে রাতে খাবারের প্রায় আধা ঘন্টা পূর্বে। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি এর পাশাপাশি অন্য কোন ঔষধ সেবন করেন আর সেই ঔষধটি যদি খাবার আগে খেতে হয়, সেক্ষেত্রে আলকুশি ও অশ্বগন্ধার এই পানীয়টি রাতে খাওয়ার পরবর্তী সময়ে খাবেন। খাওয়ার পরে অন্তত ২০ থেকে আধা ঘন্টা সময় দেরি করে অতঃপর খাবেন। কেননা এতে করে আপনার কোন ধরনের সমস্যা হবে না বরং আপনি এর সর্বোচ্চ উপকারটা ভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও অশ্বগন্ধা গুড়া বা আলকুশি পাউডার নিয়মিত চা বানিয়ে খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনি এক কাপ অশ্বগন্ধার গুরামেশনও চায়ে সামান্য মধু মিশিয়ে খেতে পারবেন।
পাশাপাশি অশ্বগন্ধা, আলকুশি পাউডার এবং মধু ও বাদাম একসঙ্গে মিশিয়ে ঘুমের টনিক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি নিয়মিত এভাবে বাদামের সঙ্গে মিশিয়ে অশ্বগন্ধা ও আলকুশি খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা কমবে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন এবং অনেক ভাল ঘুম হবে। পাশাপাশি অশ্বগন্ধা আপনি ক্ষতস্থানে মলম হিসেবেও লাগাতে পারেন। কেননা অশ্বগন্ধা গুড়া মলমের মতো করে হত বা প্রদায়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। আর এটা দারুন কার্যকরী। যাই হোক, আপনি যদি এই দুইটি উপকারী খাদ্য পণ্যের থেকে সর্বোচ্চ উপকার পেতে চান তাহলে আমাদের বলা প্রথম নিয়ম মেনে নিয়মিত অশ্বগন্ধা এবং আলকুশি পাউডার পানীয় বানিয়ে বানিয়ে রাতে খাবারের পর খান।
তবে হ্যাঁ, আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম না হয় জেনে নিলেন, কিন্তু আপনি কি জানেন অশ্বগন্ধা ও আলকুশি পাউডার সাধারণত আমাদের শরীরের কি কি উপকার করে! যদি না জেনে থাকেন তাহলে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশটুকু দেখুন।
★ অশ্বগন্ধা পাউডার খাওয়ার উপকারিতা:—-
অশ্বগন্ধা আমাদের শরীরের একাধিক উপকারে আসে। আপনি যদি নিয়মিত অশ্বগন্ধা পাউডার খান সেক্ষেত্রে আপনার যে সকল উপকারগুলো হবে সেগুলো হলো:
> মানসিক চাপ কমবে
> শরীর অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে
> ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোগশক্তি গড়ে উঠবে
> সন্ধি স্থলের ব্যাথা থেকে মুক্তি মিলবে
> শরীর পরিষ্কার থাকবে এবং অকল বার্ধক্যের উপসর্গ প্রতিরোধ করবে
> আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে শুক্রাণু বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে
> বাত, পিত্ত এবং কফ জনিত সমস্যার সমাধান এনে দেবে।
এজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এই অশ্বগন্ধা নিয়মিত খাওয়া। এছাড়াও চিকিৎসকরা এটা বলেছেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে, থাইরয়েড প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করতে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে দারুন কাজ করে অশ্বগন্ধা।
★ এখন আসুন আলকুশি পাউডার এর উপকার গুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া যাক।
আলকুশি পাউডার খাওয়ার উপকারিতা:—–
অশ্বগন্ধার মত আলকুশি পাউডারেরও রয়েছে একাধিক পুষ্টি উপাদান। আর তাই এটিও যদি আমরা নিয়মিত খাই সেক্ষেত্রে বেশ কিছু উপকার মিলবে। বলা হয় আলকুশি পাউডার একটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস। আর প্রাকৃতিক শক্তির উৎস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এটা তো আমরা সবাই কমবেশি জানি।
আপনি যদি দেহের পুষ্টিহীনতা পূরণ করতে চান তাহলে আলকুশের শোধিত বীজের পাউডার আপনাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করবে এবং দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব দূর করে দেবে।
কেননা এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, ক্যালসিয়াম আয়রন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস অ্যামিনো এসিড সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান। যেগুলোর প্রত্যেকটি আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর করতে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং জ্বর সর্দির মতো সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করে।
এছাড়াও আলকুশি পাউডার পোকামাকড়ের কামড়ে বা সাপ বিচ্ছুর দংশনে হত হওয়া স্থানে লাগালে ক্ষতস্থান দ্রুত ঠিক হয়ে যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন আলকুশিতে রয়েছে কত উপকারিতা! অতএব বিষয়টা এটা দাঁড়ালো, আমরা যদি আলকুশি ও অশ্বগন্ধা একসঙ্গে মিশিয়ে বা আলাদাভাবে নিয়মিত খাই তাহলে এই দুইটি খাদ্য পণ্যই আমাদের শরীরে দারুন কিছু কার্য সম্পাদনে সাহায্য করবে এবং আমাদেরকে ভেতর থেকে রাখবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।
★ অশ্বগন্ধা মাদার খাওয়ার নিয়ম :—
অশ্বগন্ধা যেমন গুড়া হিসেবে পাওয়া যায় ঠিক একইভাবে এটি হোমিও সিরাপ হিসেবেও সংগ্রহ করা যায়। অনেকেই জানতে চান অশ্বগন্ধা মাদার খাওয়ার নিয়ম কি? মূলত এর সাথে অনেকেই নতুন পরিচিত। তাই জানার উদ্দেশ্যে অনেক সময় সার্চ করে থাকেন।
যাইহোক- অশ্বগন্ধা মাদার (Ashwagandha Mother Tincture) হচ্ছে এক ধরনের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। এটি সাধারণত স্ট্রেস কমানো, শক্তি বৃদ্ধি এবং সাধারণ সুস্থতা উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
★খাওয়ার উপযুক্ত সময় :——
আর এই অশ্বগন্ধা মাদার খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে সকালে ও রাতে খাওয়ার আগে অর্থাৎ খালি পেটে। তবে হ্যাঁ মনে রাখবেন হোমিওপ্যাথিক বা এলোপ্যাথিক যে ঔষধই হোক না কেন, যদি আপনি সেবন করতে চান তাহলে আপনার সমস্যা এবং শরীরের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে খেতে হবে আর এজন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা অতিব জরুরী। আর যদি আপনি অশ্বগন্ধার গুড়া বা আলকুশি পাউডার খান সেক্ষেত্রে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবে অর্গানিক গুড়া পাউডার গুলো প্রসেসিং করে খেতে পারেন। যেমন কোন পানীয় বানিয়ে বা চা বানিয়ে। কেননা এতে করে শরীরের জন্য কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। আর তাই স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা চিন্তা করে অবশ্যই এই বিষয়টি মাথায় রাখুন।
<<<>>>ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা:—–
অনেকে আবার ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা কি এটা আলাদাভাবে জানতে চান। মূলত অশ্বগন্ধা টেস্টোস্টেরন বাড়াতে এবং ছেলেদের ফার্টিলিটি বাড়াতে সর্বোচ্চ সাহায্য করে। আর আপনি হয়তো জানতেন মাসল বিল্ড করতে টেস্টোস্টেরন হরমোন খুবই জরুরী। আর তাই যারা মাসেল বানাতে চান তাদের জন্য অশোগন্ধা খুবই উপকারী একটি খাদ্যপণ্য। এছাড়াও অশ্বগন্ধিতে অন্যান্য আর যে উপকরণগুলো রয়েছে সেগুলো পুরুষের পুরুষত্ব বৃদ্ধিতেও কাজে আসে।
<<<< পরিশেষে >>>
তো অডিয়েন্স বন্ধুরা, এই ছিল আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। যদি উপকার পেতে চান তাহলে আজই আলকুশি ও অশ্বগন্ধা খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।